স্বাস্থ্যকর খাবার
মানুষের মৌলিক চাহিদার একটি হল খাদ্য। খাদ্য খেলে শরীরের বৃদ্ধি ঘটে, পুষ্টি সরবরাহ হয়, রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ে। কিন্তু সব খাবারই কি পুষ্টিকর? শরীরের জন্য সবই কি উপকারী? উত্তর হলো না। আমাদের খেতে হবে সঠিক এবং সুষম খাবার এবং সঠিক সময়ে।
আমরা আমাদের দেহের যে পরিমাণ শক্তি ব্যবহার করি তার জন্য পর্যাপ্ত পরিমাণে ক্যালরি গ্রহণ করা দরকার। আমাদের ক্যালরি গ্রহণ ও শক্তি খরচের মধ্যে ভারসাম্য বজায় রাখতে স্বাস্থ্যকর খাবার খেতে হবে। আর এটাই স্বাস্থ্যকর খাবারের চাবিকাঠি।
আমরা যদি আমাদের শরীরের প্রয়োজনের চেয়ে বেশি খাই বা পান করি তবে আমাদের ওজন বাড়বে এবং শরীরের ভারসাম্য নষ্ট হবে। কারণ শরীরের অতিরিক্ত যে শক্তি অব্যবহৃত থাকে তা চর্বি হিসাবে সঞ্চিত হয়। আবার যদি খুব কম খাই এবং পান করি তবে আমাদের ওজন হ্রাস পাবে। তাতেও শরীরের ভারসাম্য নষ্ট হবে। শরীরে পুষ্টির ঘাটতি দেখা দেবে।
স্বাস্থ্যকর খাবার বলতে আসলে কি বুঝি?
স্বাস্থ্যকর খাবার মানে হল যে খাবারে সব খাদ্য উপাদান যথাযথ পরিমাণে উপস্থিত থাকে। এরকম খাবার হল সুষম খাদ্য। সুষম খাদ্য গ্রহণের মাধ্যমে আমাদের শরীর তার প্রয়োজনীয় সব পুষ্টি পায়। এছাড়া খাদ্য গ্রহনের নির্দিষ্ট সময়ও আছে। অসময়ে খাবার গ্রহণও ঠিক নয়।
গবেষণায় দেখা যায় যে, পুরুষদের খাবারে দিনে প্রায় ২,৫০০ ক্যালোরি এবং মহিলাদের খাবারে প্রতিদিন প্রায় ২,০০০ ক্যালোরি থাকা উচিত।
আমরা অনেকে সকালের নাস্তা এড়িয়ে যাই কারণ মনে করি যে এটি ওজন কমাতে সাহায্য করবে। কিন্তু রাতের দীর্ঘ সময় ঘুম থেকে ওঠার পরে সকালে আমাদের পাকস্থলি খালি থাকে। এজন্য সকালবেলা ফাইবার, কম চর্বি, চিনি এবং লবণ সমৃদ্ধ একটি সুষম খাদ্য গ্রহণের মাধ্যমে আমরা প্রয়োজনীয় পুষ্টি পেতে পারি।
আমাদের প্রাত্যহিক খাবারের এক তৃতীয়াংশের বেশি শর্করা হওয়া উচিত। এসব শর্করার মধ্যে রয়েছে আলু, রুটি, ভাত এবং সিরিয়াল বা ওটস।
দানাদার শস্যে উচ্চ মানের ফাইবার উপস্থিত থাকে। এজন্য ভাত, লাল আটার রুটি, আলু ইত্যাদি আমাদের প্রতিদিনই গ্রহণ করা উচিত। কারণ এ খাবারগুলোতে পরিশ্রুত স্টার্চি কার্বোহাইড্রেটের চেয়ে বেশি ফাইবার থাকে এবং দীর্ঘ সময়ের জন্য শরীরে শক্তি জমা রাখতে সহায়তা করে।
এজন্য প্রতিটি প্রধান খাবারের সাথে কমপক্ষে ১ টি শর্করা অন্তর্ভুক্ত করতে হবে। কেউ কেউ মনে করেন এসব শর্করা ওজন বাড়াচ্ছে। কিন্তু এ কথা ঠিক নয়, যেমন ছোলায় যে কার্বোহাইড্রেট রয়েছে তা অর্ধেকেরও কম ক্যালরি ও চর্বি সরবরাহ করে।
তাছাড়া যখন এই ধরনের খাবার রান্না বা পরিবেশন করা হয় তখন সেগুলোতে যোগ করা চর্বি বা তেল যা ক্যালরির পরিমাণ বাড়ায় – উদাহরণস্বরূপ, আলুর চিপস ভাজতে গিয়ে তেল লাগে, রুটি বানাতে বা ভাজতে গিয়ে মাখন বা তেল ব্যবহৃত হওয়ায় এসব খাবারের ক্যালরি বেড়ে যায়। যা স্থূলতার সহায়ক হতে পারে।
মস্তিষ্কের জন্য উপকারী মাছঃ
আমাদের মস্তিষ্কের প্রায় ৬০ শতাংশ চর্বি দিয়ে গঠিত। আর এই চর্বির প্রায় অর্ধেকই ওমেগা–৩ ফ্যাটি অ্যাসিডের অবদান। তাই মস্তিষ্কের জন্য ভালো মাছ হলো স্যামন, ট্রাউট, আলবাকোর টুনা, হেরিং ও সার্ডিন। এ ধরনের মাছে আছে প্রচুর ওমেগা–৩ ফ্যাটি অ্যাসিড।
গ্রিন টিতে উপকার কী?
শরীরের বাড়তি চর্বি পুড়িয়ে ওজন কমাতে সাহায্য করে গ্রিন টি। এক কাপ গ্রিন টি পান করলে শরীরের ৪ শতাংশ শক্তি বেশি ব্যয় হয়, যা থেকে বাড়তি চর্বি পোড়ে প্রায় ১৭ শতাংশ। বিশেষ করে পেটের ক্ষতিকর চর্বি কমাতে সাহায্য করে গ্রিন টি। এই চায়ের পাতার চেয়ে গুঁড়া ওজন কমাতে বেশি কার্যকর।
নিয়মিত কফি খেলে শরীরে কী হয়?
কফি বিশ্বব্যাপী জনপ্রিয় পানীয়ের মধ্যে অন্যতম। ক্লান্তিহীন শরীরে দ্রুত শক্তি ফিরে পেতে এর জুড়ি নেই। তাই অনেকেই হাতে তুলে নেন কফি। কিন্তু আপনি কি জানেন, নিয়মিত কফি খেলে শরীরে কী পরিবর্তন ঘটে?
কফির উপকারিতা যেমন রয়েছে তেমনি রয়েছে অপকারিতাও।
কফির উপকারিতা ও অপকারিতা
কফি বীজ কফি চেরি নামক এক ধরনের ফলের বীজ। বিশ্বের প্রায় ৭০টি দেশে এই ফলের গাছ জন্মে। কফির সঙ্গে দুধ, চিনি মিশিয়ে যেমন খাওয়া যায়। আবার কফির সঙ্গে কিছু না মিশিয়ে ব্ল্যাক কফিও খাওয়া যায়। তবে যেভাবেই কফি খান না কেন বিশেষজ্ঞরা বলছেন, কফির বীজে লুকিয়ে রয়েছে নানা উপকারী গুণ।
কফির উপকারিতা
১) কফিতে থাকা ক্লোরোজেনিক অ্যাসিড, যা তাড়াতাড়ি মেদ ঝরাতে সাহায্য করে। এ ছাড়া নতুন করে শরীরে মেদ জমার আশঙ্কাও কমায়।
২) কফি শরীরের বিপাকীয় হার বাড়ায়। শারীরিক শক্তিও বাড়াতে সহায়তা করে এটি। এতে চট করে খিদে পেয়ে যাওয়ার প্রবণতা বন্ধ হয়।
৩) কালো কফি খেলে সারা দিন অনেক বেশি সক্রিয় থাকা যায়। কাজেও অনেক বেশি মন দেওয়া যায়। অতিরিক্ত পরিমাণ ক্যালোরি ঝরাতেও সাহায্য করে এই পানীয়। তাই শরীরচর্চা করার আগে কালো কফি খেতে পারেন।
৪) শরীরে অতিরিক্ত পানি জমলে তা বের করে দিতে পারে কফি। কফি খাওয়ার পর শরীর থেকে প্রস্রাবের মাধ্যমে অতিরিক্ত পানি বেরিয়ে যায়। এ কারণে কফিকে ‘ওয়াটার ওয়েট’ নিয়ন্ত্রকও বলা হয়।
কফির যতই উপকারিতা থাকুক না কেন নিয়মিত ছোট এক কাপের বেশি খাওয়া ঠিক নয়। এতে উপকারের চেয়ে অপকারিতাই বেশি হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে বলে মনে করছেন পুষ্টিবিদরা।
কফির অপকারিতা
উপকারী কফি সঠিকভাবে না খেলে হিতে বিপরীত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। এতে করে শরীর কফির উপকারী গুণতো পায় না বরং কফিই হয়ে ওঠে শরীরে নানা সমস্যার কারণ। যেমন-
১। খালি পেটে কফি খাওয়ার অভ্যাসে পাকস্থলীতে হাইড্রোক্লোরিক অ্যাসিড তৈরি হয়। এ এসিড পেটে গ্যাস ও অ্যাসিডিটির সমস্যা তৈরি করে। অনেক সময় খালি পেটে কফি খাওয়ার অভ্যাস ডেকে নিয়ে আসতে পারে আলসারের সমস্যাকে।
২। প্রতিদিন ২ কাপের বেশি কফি খাওয়ার অভ্যাস কিডনির স্বাভাবিক কার্যকারিতা ধীরে ধীরে নষ্ট করে।
৩। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, কফি দ্রুত শরীরে চাঙা ভাব ফিরিয়ে আনলেও তা মস্তিষ্কের ওপর চাপ তৈরি করে।
তাই নিয়মিত বেশি কফি খাওয়ার অভ্যাস থেকে বিরত থাকুন। কফির শুধু উপকারিতা টুকু পেতে চাইলে হালকা নাশতার পর খেতে পারেন এক কাপ কফি। তবে যাদের প্রেশার লো তাদের কখনই ব্ল্যাক কফি খাবেন না। তারা ভরসা রাখতে পারেন দুধ, চিনি মেশানো এক কাপ কফিতে। তবে সেটিও দিনে একবারের বেশি গ্রহণ উচিত নয় বলে মনে করছেন চিকিৎসকরা।
(সংগৃহীত)
editor's pick
latest video
news via inbox
Nulla turp dis cursus. Integer liberos euismod pretium faucibua